#ঢাকাঃ প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান । তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হার্ট ও কিডনির জটিলতা কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। অধ্যাপকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রয়াত হন এই অধ্যাপক । তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই হৃদরোগ এবং কিডনির জটিলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সাহিত্য-গবেষণা লেখালেখি ও সাংগঠনিক কার্যকলাপের জন্যও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার এটিএম মোয়াজ্জেম । তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক । মা সৈয়দা খাতুন গৃহিনী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল । পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক । আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন । তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই । বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন ।
আনিসুজ্জামান কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন । এখানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাংলাদেশে চলে আসেন এবং খুলনা জেলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন । এক বছর পর পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন । ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষা শিল্প সাহিত্য সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলা অকাদেমি সাহিত্য পুরস্কার-একুশে পদক সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি শিল্পকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘যামিনী’ এবং বাংলা মাসিকপত্র ‘কালি ও কলম’ এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আনিসুজ্জামান ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক । তিনি ভহাসা আন্দোলন এবং উন সত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ডঃ কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন । প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন । শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত করা হয় । শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় ।
Follow us on
Download News18 App
Check Also
নেতানিয়াহুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলিকে নিয়োগ ইরানের
Asia Monitor18 এক ইসরায়েলই নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সহ শীর্ষ ইসরায়েলই …