বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা দীর্ঘায়িত করতেই সরকার সাজা স্থগিতের চালাকির আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ছয় মাস ছয় মাস করে সাজা স্থগিত করছে, তার মানে সাজা কিন্তু কমছে না। সেই সাজা আবার গুনতে হবে ভবিষ্যতে যখন তাদের প্রয়োজন হবে। এটা হচ্ছে আরেকটা চালাকি। অর্থাৎ আরও বেশি দীর্ঘায়িত করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক মানববন্ধনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। আয়োজক ফোরামের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফরিদা ইয়াসমিন, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আশপাশের এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যেসব চুক্তি করা হচ্ছে, তার কোনোটাই বাংলাদেশের পক্ষে নয়৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সবক দেন, চুক্তি ও সমঝোতার পার্থক্য নাকি বুঝি না৷ শুধু একটা কথা বলব, দেশের সঙ্গে বেইমানি করবেন না৷ এমন চুক্তি ও সমঝোতায় স্বাক্ষর করবেন না, যেটা জনগণের স্বার্থবিরোধী।’
এবার ভারত সফর থেকে সরকার কী এনেছে—জানতে চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো কথা নেই৷ ভারত নাকি আমাদের কাছের বন্ধু। এত কাছের বন্ধু কিন্তু সীমান্তে গুলি করে নাগরিক হত্যা করে। এমন নজির বিশ্বে কোথাও নেই৷ সরকার আত্মরক্ষার্থে যেসব কথা বলছে, তাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই৷ যারা আসবে, তাদের বরণ করে নেব৷ কিন্তু নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে দখল করে নেবেন, সেটা হতে দেব না৷ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির এজিএমে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “আদালতের রায়ের পরে কোথায় থাকব জানি না৷ আপনারা গণতন্ত্রের আন্দোলনে কখনো পিছপা হবেন না।”’
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান৷ তিনি বলেন, সরকার তাদের ময়ূরসিংহাসন বজায় রাখতে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে তাদের সিংহাসন থাকবে না। সরকার বাংলাদেশকে অন্য দেশের দাসে পরিণত করেছে৷ শুধু স্লোগানে আটকে না থেকে রাজপথে নামতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যেসব চুক্তি ও সমঝোতা করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমি শুধু বলব, মানুষকে বোকা বানিয়ে, ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই করবেন না যেটা আমার দেশের আমার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিস্তার পানি যে সমস্যা, সেটা আপনি বাতিল করে দিলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান হলো না, সমস্যাই রয়ে গেল। এবার আপনারা দেশকে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন। সীমান্তে হত্যা হচ্ছে প্রতিদিন। এ বিষয়ে একটা কথা বলেননি ওই সফরে।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সারা দেশে দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে। খালেদা জিয়া আজকে মৃত্যুশয্যায়। তিনি মিথ্যা মামলায় কারাগারে জর্জরিত। তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।