উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মার্কিন ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেওয়ার চুক্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের নথি ফাঁস করে বহু মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল উইকিলিকস।
অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর ধরে ব্রিটেনে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, তাকে আর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে যেতে হবে না এবং যুক্তরাজ্যে কারাবন্দি থাকার সময়কে সাজা খাটা হিসেবে গণ্য করা হবে। উইকিলিকস জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগের মধ্যে একটিতে দোষ স্বীকার করবেন তিনি। এই আইনি প্রক্রিয়া বুধবার নর্দার্নমারিয়ানা আইল্যান্ডসের একটি আদালতে সম্পন্ন হবে। অ্যাসাঞ্জের মুক্তির ভিডিও উইকিলিকস তাদের এক্সে প্রকাশ করেছে, যেখানে তাকে বিমানবন্দরের পথে দেখা যায়।
উইকিলিকস ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেয়, যা বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এর মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত ৪০ হাজার নথি ছিল। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ২০০৭ সালে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে রয়টার্সের দুজন সংবাদকর্মীসহ এক ডজন মানুষকে হত্যা করতে দেখা যায়।
অ্যাসাঞ্জ ২০১১ সালে সুইডেনে যৌন নিপীড়নের মামলায় লন্ডনে গ্রেপ্তার হন এবং পরে জামিন পান। যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের আশঙ্কায় ২০১২ সালে একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। সাত বছর দূতাবাসে কাটানোর পর ২০১৯ সালের এপ্রিলে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং বেলমার্শ কারাগারে ছিলেন।
কারাগারে থাকাকালে অ্যাসাঞ্জ তার আইনজীবী ও দীর্ঘদিনের প্রেমিকা স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিদের মতে, অ্যাসাঞ্জের ফাঁস করা গোপন নথিতে নাম থাকা গুপ্তচরদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে অ্যাসাঞ্জের বিচার বন্ধে অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি অনুরোধ বিবেচনা করেন। তবে অ্যাসাঞ্জের মার্কিন আইনজীবী মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দিনটি তার স্ত্রী স্টেলা মরিস ও সমর্থকদের জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।