নিউ ক্যালেডোনিয়া যা প্রশান্ত মহাসাগরের কাছে অবস্থিত ফরাসি সম্প্রেষিত একটি দ্বীপ অঞ্চল, বর্তমানে হিংসাত্মক বিক্ষোভের জন্য ফ্রান্স সেখানে পরবর্তী ১২দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এই সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মধ্যে চারজন মারা গেছে এবং কয়েকশ জনকে গ্রেপ্তার করার পরই ফ্রান্সের এই সিধান্ত। ফরাসি সংসদে একটি বিতর্কিত বিল পাশ হওয়ার পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
এই বিক্ষোভটি ফরাসি সংসদে একটি বিতর্কিত বিলের পাশকে ঘিরে। এই বিল অনুসারে যারা ফরাসি বাসিন্দা রয়েছে তাদের মধ্যে কেউ যদি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নিউ ক্যালেটোনিয়ায় বসবাস করে তাহলে সে সেখানকার বাসিন্দাদের মত ভোটাধিকার পাবে। এই বিলটি দেশীয় মেলানেশিয়ান কানাক মানুষ এবং বয়স্ক বাসিন্দাদের মধ্যে একটি বিক্ষোভের ঝড় তোলে। এবং তারা মনে করেন যে বিলতি পাশ হলে তাদের ভোটের গুরুত্ব হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
ইতিহাস
নিউ ক্যালেডোনিয়া অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। আদিবাসী গোষ্ঠী, বিশেষ করে মেলানেশিয়ান কনক লোকেরা কয়েক হাজার বছর ধরে এখানে বসবাস করছে। ১৮৫৩ সালে এই দ্বীপটি ফ্রান্স দ্বারা সংযুক্ত হয় এবং দ্বীপের উপর নিয়ন্ত্রণ শুরু করে।
ফ্রান্স প্রাথমিকভাবে এটিকে তার বন্দীদের নির্বাসন দেওয়ার জন্য একটি শাস্তির উপনিবেশ হিসাবে ব্যবহার করেছিল, যেমন ব্রিটিশরা প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়াকে ব্যবহার করেছিল।
কানাকরা প্রায়ই ফরাসি শাসনের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে , ১৯৮০ এর দশকে পরিস্থিতি একটি অস্থির মোড় নেয়। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য ক্রান্তিকালীন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৮ সালে, দ্বীপটিকে সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রদানের জন্য ফ্রান্স এবং নিউ ক্যালেডোনিয়ার মধ্যে নউমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
বিলটি, যা এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, বামপন্থী ফরাসি এমপিদের দ্বারা তা সমালোচিত হয়েছে। এবং অন্যরা, যেমন রিপাবলিকান দলের এমপি ফিলিপ গসেলিন, ফরাসি বাসিন্দাদের অধিকারের পক্ষে যুক্তি দেয়।
দ্বীপটি ফরাসির জন্য তার অবস্থানের কারণে স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব ধারণ করে, উত্তপ্ত মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে, প্রশান্ত মহাসাগর একটি অঞ্চল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যেখানে উভয় দেশ প্রভাবের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন যে, ‘তিনি বিলের অনুমোদন দেরি করবেন এবং নিউ ক্যালেডোনিয়ার প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন’। তিনি আরও বলেন যে, ‘জুন মাসের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি গ্রহণ করা হবে, অন্যথায় তিনি বিলটি আইন হিসেবে স্বাক্ষর করবেন’।
বর্তমান অস্থিরতা ফরাসি সম্প্রেষিত অঞ্চলটি আগেও দেখেছে, তবে ১৯৮০-এর দশকের থেকেও বর্তমান অবস্থা আরও সংকটজনক। নিউ ক্যালেডোনিয়ায় সংঘাতের জেরে ১৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জনসম্পত্তি লুট এবং পোড়ানোর ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে। প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ করা হয়েছে, এবং নোটিশ না দেওয়া অবধি পর্যন্ত স্কুলের ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফরাসি কর্তৃপক্ষকে অশান্তির মধ্যেও আদিবাসী কানাক জনগণের অধিকার বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিউ ক্যালেডোনিয়ার প্রতিনিধিদের সমঝোতা আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ, এবং বিশ্ব নিউ ক্যালেডোনিয়ার এই সংকটের সাথে মোকাবিলা করার প্রক্রিয়াটি লক্ষ্য করছে। এই প্রতিবাদের ফলাফল এবং বিতর্কিত বিলের উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিউ ক্যালেডোনিয়ার ভবিষ্যত এবং ফ্রান্সের সাথে তার সম্পর্কের জন্য দূরগামী প্রভাব ফেলতে পারে।