খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ‘লাল’ শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশ। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৪টি দেশ এই শ্রেণিতে আছে। বিশ্বব্যাংক গত এক বছরের খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে এই শ্রেণিতে রেখেছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর তা ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এলেও সম্প্রতি আবার ৯ শতাংশের ঘরে উঠেছে। চলতি বছরের জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।
তবে বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক ওই হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমলেও এখনো প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, মিসর, জাপান, ভিয়েতনাম ও আর্জেন্টিনার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখনো বাড়তি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও মালদ্বীপে মূল্যস্ফীতির সূচক নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া সব দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ-জুন সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ছিল জিম্বাবুয়েতে ৮০ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ছিল লেবাননে, সেখানেও তা ৪৪ শতাংশ। মিসরে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ।
ছয় মাস আগেও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে লাল শ্রেণিতে বেশ কয়েকটি উন্নত দেশও ছিল। ওই সময় এই শ্রেণিতে সব মিলিয়ে ছিল ৩৪টি দেশ। ছয় মাসের ব্যবধানে লাল শ্রেণি থেকে বের হয়ে গেছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য। মূলত নানামুখী পদক্ষেপের কারণেই এসব দেশ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। তাই দেশগুলোকে লাল শ্রেণি থেকে বাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বোচ্চ।
সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো অর্থবছরের কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। আবার ১০ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়নি। অন্যদিকে জাতীয় মজুরি হারের প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশের মতো।