চীনের তিব্বতের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রচেষ্টা হান জনগোষ্ঠীরই লাভ, তিব্বতিদের জন্য বঞ্চনা, রিপোর্টে উল্লেখ

চীনের তিব্বত অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় হান জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বলে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিব্বতের আদি বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, এবং অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে ক্রমশ বঞ্চিত হচ্ছে।

চীনের তিব্বতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ

তিব্বত, চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যা ঐতিহাসিকভাবে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রস্থল। চীন সরকার তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রসার, এবং পর্যটন খাতের উন্নয়ন।

চীনের সরকার এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে তিব্বতের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে প্রচার করে আসছে। তারা দাবি করছে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে তিব্বতের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

হান জনগোষ্ঠীর লাভবান হওয়া

তবে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সুবিধাভোগী মূলত হান জনগোষ্ঠী, যারা চীনের বৃহত্তম জাতিগত গোষ্ঠী। তিব্বতের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সেখানে বিপুলসংখ্যক হান জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে, যারা এসব প্রকল্পের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।

হান জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরির বাজারে তিব্বতিরা খুব কমই সুযোগ পাচ্ছেন। তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও পশুপালনের জায়গায় নতুন ধরনের শিল্প ও ব্যবসার প্রচলন হচ্ছে, যা হান জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সাহায্য করছে, কিন্তু তিব্বতিদের জন্য তা বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তিব্বতিদের বঞ্চনা ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি

এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিব্বতিদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তিব্বতিদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ক্রমশ ধ্বংসের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে, তরুণ তিব্বতিরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ও জীবনযাত্রা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন প্রকল্পে খুব কমই অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে, তিব্বতিদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হয়ে বরং তারা আরও পিছিয়ে পড়ছে। অনেক তিব্বতি তাদের জমি এবং সম্পত্তি হারাচ্ছেন, যা তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

তিব্বতে চীনের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় তিব্বতিরা যে বঞ্চিত হচ্ছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। তিব্বতের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, তিব্বতিদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি তিব্বতিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়, তবে চীন সরকারকে এই প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

About Tuhina Porel

Check Also

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন

Asia Monitor18 পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতের কোনো মন্ত্রী শেষবার ২০১৫ সালে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!