পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের

সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কারের এক দফা দাবিতে নবম দিনের মতো ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসেন।সেখানে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গেলে প্রক্টরিয়াল টিমের বাধার মুখে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটক পার হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিট বাগ্‌বিতণ্ডার পর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রধান ফটক এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান করতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের এক দফা দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। এর আগে গতকাল বুধবার আট ঘণ্টা, মঙ্গলবার আধা ঘণ্টা, সোমবার সোয়া চার ঘণ্টা এবং রোববার দুই ঘণ্টা; গত সপ্তাহের ৪ জুলাই ৩৫ মিনিট এবং ৩ জুলাই পৌনে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ২ জুলাই ২০ মিনিট ও ১ জুলাই ১০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা সব ধরনের অন্যায্য কোটা বাতিল করে এটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ বাহিনী আমাদেরকে বাধা দিয়ে থামাতে চায়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামলা-মামলা করে পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’
: অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘ আমাদের আজকের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। পুলিশ আসলে কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে? প্রশ্নফাঁসের হয়ে নাকি সাধারণ জনগণেরর হয়ে? পুলিশ সাধারণ মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকলে আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বহর নিয়ে এসে বাধা দিত না। প্রশ্নফাঁসকারীদের ব্যাপারে পুলিশ তৎপর নয়। তাই যদি হতো তাহলে এতক্ষণে প্রশ্নফাঁসকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় আনত। পুলিশ সবসময় সাধারণ জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের উপর হামলা চালায়। তারা যদি ছাত্রশক্তির কথা ভুলে গিয়ে থাকে তাহলে মনে করিয়ে দিতে চাই, পুলিশের সব বাধা উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা ছাত্রদের রয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের পূর্বে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মহাসড়ক অবরোধ করলে অসুস্থ মানুষ, রোগী ছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। এসব ভোগন্তি এড়াতে মহাসড়ক অবরোধ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ। কারণ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হতে চাই না আমরা। তারা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে। অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যেকোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত আছি।’

About Ipsita Mondal

Check Also

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন

Asia Monitor18 পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতের কোনো মন্ত্রী শেষবার ২০১৫ সালে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!