কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে উত্তপ্ত ছাত্রমহল, পরিস্থিতি হাতের বাইরে ! মৃত ৬৪ , আহত প্রায় ৫০০

অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের পরিস্থিতি যত সময় গড়াচ্ছে ততই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে উত্তপ্ত বাংলাদেশ ছাত্রমহল। মৃত প্রায় ৬৪ জন এবং আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০০ পেরিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলনকারীদের উপর লাঠি, গুলি, প্লাস্টিক বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেন পুলিশ। এবং পাল্টা জবাবে আন্দোলনকারীরাও ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে পুলিশর দিকে। বাংলাদেশে টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলি বন্ধ ছিল, টেলিযোগাযোগ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং অনেক সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি নিষ্ক্রিয় ছিল। মঙ্গলবার ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা ঘটার পর থেকেই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সময়ের সাথে  সাথে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে ।

আজ সকাল থেকেই রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, পল্টন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টির ঘটনা ঘটেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আন্দোলনকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের নানান প্রান্তে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন দপ্তরে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে স্টেশনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয় । মেট্রো স্টেশনেও একই ঘটনা দেখা যায়, যার জন্য মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সময়ের সাথে  সাথে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে ।

 সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে আগেই জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে যখন মসজিদের মাইকে লড়াইয়ে নামার ডাক দেওয়া হয়। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত এবং গোটা দেশ কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগের অবস্থাই গুরুতর। সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ বাড়ছে এবং অনেকেই নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের নরসিংদীতে একটি কারাগারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কারাগারের একাংশে এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বেশ কয়েকজন কয়েদি পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সন্ধ্যায়, যখন বিক্ষোভকারীদের একটি দল কারাগারের দিকে মিছিল করে আসছিল।নরসিংদী কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিক্ষোভকারীরা কারাগারের প্রধান গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তারা অগ্নি সংযোগ করে কারাগারের একাংশে, যা দ্রুত পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে বেশ কয়েকজন কয়েদি পালিয়ে গেছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং পলাতক কয়েদিদের ধরতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। নরসিংদীর স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগারের পুনর্নির্মাণ ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশে চলমান সংঘর্ষ ও অস্থিরতার পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক গভীর নজর রাখছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারতের সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ভারতের সরকার বাংলাদেশে শান্তি ও সুরক্ষা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জয়সওয়াল বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষের সাথে আছি এবং এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকব।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা চলছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করা হবে।

বিক্ষোভের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও হরতাল চলছে, যার ফলে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

দর্শনা দিয়ে দেশে ফিরলেন ভারত ও নেপালের ৪৯ শিক্ষার্থী, অপেক্ষায় আরও অনেকে। প্রায় ২৪৫ ভারতীয় ছাত্র পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বাড়ি ফিরছে।

“শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টার মধ্যে প্রায় ৯৬ জন শিক্ষার্থী গেদে দর্শনায় সীমান্ত অতিক্রম করেছিল।প্রায় ১৫০ জন ছাত্রের আরেকটি ব্যাচ রাতের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।” একটি সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবও। বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি জানান, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব ঢাকা কর্তৃপক্ষকে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে এবং চলমান চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।

About Tuhina Porel

Check Also

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন

Asia Monitor18 পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতের কোনো মন্ত্রী শেষবার ২০১৫ সালে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!