ফিলিপাইন চীনের কোস্ট গার্ডের বিরুদ্ধে দক্ষিণ চীন সাগরে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে “নৃশংস হামলা” চালানোর অভিযোগ এনেছে। ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, চীনা কোস্ট গার্ডের সদস্যরা কুঠার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সদস্যদের রাবারের নৌকায় আক্রমণ করছে এবং নৌকাটি কেটে ফেলে। ম্যানিলা এই ঘটনাকে “সাহসী আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছে।
এই সংঘর্ষটি স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের সেকেন্ড থমাস শোলের কাছে ঘটেছে, যেখানে ফিলিপাইনের নৌবাহিনী তাদের সৈন্যদের সরবরাহ প্রদান করছিল। এই সংঘর্ষটি দক্ষিণ চীন সাগরের সম্পদসমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ উদাহরণ।
চীন পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর “অবিসংবাদিত সার্বভৌমত্ব” দাবি করে, যেখানে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ম্যানিলা, প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি জানায়। সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক কলিন কোহ বলেন, চীনের সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর জাহাজে চড়ে বসার ঘটনা নজিরবিহীন।
ফিলিপাইনের সামরিক কর্মকর্তারা জানান, চীনা কোস্ট গার্ড ফিলিপাইনের রাবারের নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে, সাতটি বন্দুক লুট করে, মোটর এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম ধ্বংস করে এবং ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এই সংঘর্ষে ফিলিপাইনের একজন নাবিক তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল হারান।
চীনা কোস্ট গার্ড টিয়ার গ্যাস, স্ট্রোব লাইট এবং সাইরেন ব্যবহার করে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে তোলে। ফিলিপাইনের সামরিক প্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনর বলেন, “শুধু জলদস্যুরাই এমন কাজ করে।”
বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ফিলিপাইনের অপারেশন মানবিক সহায়তার জন্য ছিল না, বরং তারা অস্ত্র ও নির্মাণ সামগ্রী বহন করছিল এবং ইচ্ছাকৃতভাবে চীনা জাহাজে হামলা চালায়।
দক্ষিণ চীন সাগরে ঘটে যাওয়া ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফিলিপাইনের একটি মিউচুয়াল ডিফেন্স চুক্তি রয়েছে, যা একে অপরের ওপর আক্রমণ হলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার চীনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ফিলিপাইনের পাশে আছে।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনরিক এ. মানালোকে জানান, “চীনের এই কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করে।”
এই সংঘর্ষটি চীনের নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর প্রথম ঘটনা, যা চীনা কোস্ট গার্ডকে বিদেশী জাহাজ আটক এবং ক্রুদের বিচার ছাড়াই ৬০ দিন পর্যন্ত আটক করার অনুমতি দেয়। এই ঘটনাটি মার্কিন-ফিলিপাইন মিত্রতার একটি পরীক্ষা এবং এটি উভয় দেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সক্রিয় করতে পারে।