মায়ানমারে কয়েক দশক ধরেই রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে । কিন্তু কারা এই রোহিঙ্গা? রোহিঙ্গা, যাদেরকে নাকি ঐতিহাসিকভাবে আরাকনী ভারতীয় বলা হয়। রোহিঙ্গা, পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি রাষ্ট্রবিহীন ইন্দো আর্য জনগোষ্ঠী।
আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনী উভয়ই রোহিঙ্গাদের তাদের দলে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছে। এই উভয় বাহিনীই উভয়ের সহিংস্রতার শিকার হচ্ছে। আরাকান আর্মি, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর নভেম্বরে যুদ্ধবিরতের অবসান ঘটানোর পরও ১৮ই মে বুথিডংয়ের সমস্ত সামরিক ক্যাম্প দখল করে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তারা এখন রাখাইন রাজ্যের ৯টি শহর এবং প্রতিবেশী চীন রাজ্যের পালেটওয়া শহরে দখল করেছে বলে দাবি।
মায়ানমারের জান্তা বাহিনী জোর করে রোহিঙ্গাদের তাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করছে। রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি না হলে আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ করে দেবার হুমকি দেয়। জান্তা বাহিনী নতুন সৈন্য নিয়োগের জন্য মরিয়া হওয়ার কারণ কি? জানা গেছে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে ব্যাপক আত্মসমর্পণ এর কারণে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বা তাতমাদো বাহিনীতে সৈনিকের ঘাটতি ঘটেছে এই কারণহেতু জান্তা সৈন্য নিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মায়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা এবং জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করার একটি সফল চেষ্টা চালিয়েছে এ অবস্থায় সেখানে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন আহ্বান জানাচ্ছে, ঠিক তখনই রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগের খবর আসছে।
জান্তা সৈন্যরা ২৭ মে প্রত্যেকটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিবির থেকে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী অন্তত ৩০ জন সদস্যকে সেনা প্রশিক্ষণের জন্য সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া শুরু করে।
অন্তত ১০টি শিবিরের বাসিন্দাদেরকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ঠেট কেই পাইন, ওহন টাও গি, বার সার রা, ডার পাইং এবং ঠাই চাউং। কেই পাইন ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা বাসিন্দা বুধবার বলেন, “আমাদের ক্যাম্প থেকে ৩৫ জনকে দিতে বলা হয়েছিল। যদি আমরা তা না করি, তারা আর খাদ্য সরবরাহ করবে না। জান্তা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার জন্য তাদেরকে নিয়োগ করছে।”
শিবির থেকে ঠিক কতজন রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।
রোহিঙ্গারা আরএফএ কে বলেছেন জান্তা বাহিনী মার্চ মাসে বাস্তু ছোটদের ক্যাম্প থেকে প্রায় হাজার জন রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করেছে। এবং তারপরে রোহিঙ্গা গ্রাম থেকে আরো ৩০০ জনেরও বেশি পুরুষকে নিয়ে গেছে। এখন তৃতীয় ধাপ চলছে।
সিটওয়ের একজন বাসিন্দা আরএফএকে বলেছে, জান্তা সেনাবাহিনী আরাকানি আর্মির কাছে একের পর এক অঞ্চল হারিয়ে এখন রাজধানী রক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করছে।
টাওয়ার বলেন যে, সেনাবাহিনীর কৌশল হচ্ছে রোহিঙ্গা এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আরাকান আর্মির মধ্যে চাপ সৃষ্টি করা এবং এটি কিছুটা হলেও জান্তার পক্ষে কাজ করেছে। ফলে আরাকান আর্মি কিছুটা নতি নতি শিকার করতে শুরু করেছে।