#নয়াদিল্লি: জেল থেকে ছাড়া পেলেও স্বস্তি নেই বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরীমনির (Pori Moni)। কারণ ইতিমধ্যেই বাড়িওয়ালার থেকে এবার তিনি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পেয়েছেন। আর পরীমনির এই অবস্থা দেখে পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে লেখিকা তসলিমা নাসরিনের (Taslima Nasrin)। তাঁর কথায়, “এরকম আমিও বলেছিলাম সেদিন! পরীমণির অসহায়তা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করছি।” পরীমনি গ্রেফতার হওয়ার পরে সরব হয়েছিলেন তসলিমা। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের নিজের ফেসবুকে অভিনেত্রীর হয়ে লিখলেন তিনি।
এক সময়ে তাঁকেও দেশ ছাড়তে হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও সরে যেতে বলা হয় তাঁকে। কলকাতার রওডন স্ট্রিটের বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। ছাড়তে হয়েছিল এই রাজ্যও। পরীমনিকে দেখে সেই সব স্মৃতিই যেন ফের জেগে উঠেছে তাঁর। তাই তসলিমা লিখছেন, “পরীমণি জেল থেকে বেরোলো, বাড়িতে ঢুকলো আর দেখলো তাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালা। এই ভয়ংকর দুঃসময়কে আমি খুব ভালো জানি, যেহেতু নিজের জীবনেই ঘটেছে এমন ঘটনা। মনে পড়ছে কলকাতার সেই দিনগুলোর কথা। ৭ নম্বর রওডন স্ট্রিটে ডাক্তার দেবল সেনের বাড়িতে আমি তখন ভাড়া থাকি। ২০০৭ সাল। পুলিশ কমিশনার এসে জানিয়ে যাচ্ছেন আমাকে দেশ ছাড়তে বলছেন মূখ্যমন্ত্রী, দেশ যদি আপাতত না-ও ছাড়ি, রাজ্য আমাকে আজ বা কালের মধ্যেই ছাড়তে হবে। দেশের দরজা বহুকাল বন্ধ। ইউরোপ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রাণের টানে আর ভাষার টানে আশ্রয় নিলাম, আর আমাকে কিনা এই আশ্রয়টিও ছাড়তে হবে, কোথাও তো আর ঘর বাড়ি নেই আমার, যাবো কোথায়!”
সেই সময়টা লেখিকার কাছে কতটা কঠিন হয়ে উঠেছিল তাও লিখেছেন তিনি। শুধু রাজনীতি নয়। এমনকি বন্ধু মহলও সেই সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। তসলিমা লিখছেন, “আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে নিতে চাইছে কারা! আমি সম্ভবত যত না রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার, তার চেয়ে বেশি শিকার সাহিত্যের মাফিয়া ডনদের রাজনীতির। যখন আশে পাশে কেউ নেই, বিপদ দেখে বন্ধুদের উপস্থিতি একশ’ থেকে আচমকা শূন্যে চলে এলো, একা একা আমি চিৎকার করছি, আমি রাজ্য ছাড়বো না, শহর ছাড়বো না, বাড়ি ছাড়বো না, কারণ আমি কোনও অন্যায় করিনি, আমি মানবতার কথা লিখি। মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করা, মানবতার কথা লেখা অন্যায় তো নয়!”
তিনি আরও লিখছেন, “ভালোবেসে এক বাঙালি লেখক বাংলায় বাস করছে, তাকে বাংলা থেকে বের করে দেওয়া, তাকে নিষিদ্ধ করা মানে তার লেখক সত্ত্বাকে ধ্বংস করে দেওয়া— তাই আমি অস্বীকার করেছিলাম রাজ্য ছাড়তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন ফোন করে বললেন আমাকে রাজ্য ছাড়তেই হবে, বুঝলাম যাদের উচিত ছিল পাশে দাঁড়াবার, তারাই পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কলকাতা তো দেখিয়ে দিয়েছে লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের বই নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়, লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের সর্বনাশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।”
আর এই সবের মধ্যেই হাতে বাড়িওয়ালা নোটিশ ধরিয়েছিলেন বাড়ি ছাড়ার। তসলিমা সেই স্মৃতিচারণ করে বলছেন, “চারদিক থেকে যখন অন্ধকার নেমে আসছে, তখন আমার বাড়িওয়ালা আমাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন! সম্ভবত মূখ্যমন্ত্রীই বাড়িওয়ালাকে বলেছিলেন ওই নোটিশটি দিতে। ষড়যন্ত্র কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।”
এর পরে ফের পরীমনির প্রসঙ্গে ফেরেন তসলিমা। তিনি লিখছেন, “পরীমণির শত্রু যেমন কম নয়, অনুরাগী শুভানুধ্যায়ীও তেমন কম নয়, তারা এই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়াবে, আমার বিশ্বাস। অসহায় আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রথমে রাজ্য ছাড়তে, পরে দেশ ছাড়তে আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল।”
Follow us on
Download News18 App
Check Also
নেতানিয়াহুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলিকে নিয়োগ ইরানের
Asia Monitor18 এক ইসরায়েলই নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সহ শীর্ষ ইসরায়েলই …