সঙ্গীতশিল্পী মিতা হকের মৃত্যুতে স্তব্ধ দুই বাংলা, শোক প্রকাশ করলেন শিল্পীরা

#ঢাকা: চলে গেলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। রবিবার ঢাকার এক হাসপাতালে সকাল ৬.২০ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। করোনা সংক্রমণজনিত অসুস্থতার কারণেই শিল্পীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও চারদিন আগে তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।
করোনায় আক্রান্ত হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মিতা হক। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, হত পাঁচ বছর ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। নিয়মিত ডায়ালিসিস চলছিল তাঁর। ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাই করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরেও শেষরক্ষা হল না। আজ ভোরবেলা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। সঙ্গীত প্রেমী মানুষ রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতে তাঁর অসীম অবদান সম্পর্কে অবহিত। ২০০টিরও বেশি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন তিনি। তাই তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে সঙ্গীতজগতে।
দুই বাংলাতেই প্রয়াত শিল্পীর অসংখ্য অনুরাগী রয়েছেন। সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী নিউজ ১৮ বাংলার কাছে শোক প্রকাশ করেছেন। ইমন বলছেন, “মিতাদি একজন অত্যন্ত গুণী মানুষ ছিলেন। আজীবন রবীন্দ্রনাথের গানের সাধনা করে গিয়েছেন। আমার সঙ্গে খুব বেশি ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু আমি ওনার গানের গুণমুগ্ধ একজন ভক্ত। অনেক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন কিডনির অসুখে। অনেক লড়াই করেছেন। প্রত্যেকবারই সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন। অনেকটা কম বয়সে চলে গেলেন। এমন শিল্পীদের চলে যাওয়া মানে আমাদের ক্ষতি। সমাজ ও সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের ক্ষতি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেখানেই রয়েছেন যেন ভালো থাকেন।”
গায়িকা জয়তী চক্রবর্তীও মিতা হকের সঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানালেন নিউজ ১৮ বাংলাকে। জয়তী বলছেন, “প্রথম দিন থেকেই মনে হয়েছিল, এত বড় মাপের শিল্পী। অথচ খুব মাটির কাছাকাছি। ওঁর থেকে শেখার, বড় শিল্পী হতে হলে বাকিদের সঙ্গে মিশে যেতে হয়। গুলশন ক্লাবে আমার একটি অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের পরে আমি প্রণাম করে বলেছিলাম, আপনি আসবেন ভাবতে পারিনি। তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বরপ্রদত্ত কণ্ঠ তোমার। সেই কণ্ঠে আর এক ঈশ্বরের গান শুনতে আসব না, তা কি হয়! উনি ভালো শিল্পীর সঙ্গে একজন ভালো মানুষও ছিলেন। খুব আন্তরিক মানুষ ছিলেন তিনি।”
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কমলিনী মুখোপাধ্য়ায় ফেসবুকে মিতা হকের একটি অ্যালবাম শেয়ার করে লিখেছেন, “মিতাদি। মিতা হক। তোমার গান যে আমি কত শুনতাম! আমাদের কখনও দেখা হয়নি। কিন্তু তবুও তুমি আমার খুব পরিচিত ছিলে। ইশ যদি তোমায় একবার এটা সামনা সামনি বলার সুযোগ পেতাম। সঙ্গীতের জন্য তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি তোমার গান শুনব, সব সময়ের মতো।”
বাংলাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা শোক প্রকাশ করেছেন। মিতা হকের সঙ্গেই শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা তাঁর। বিষয়ও এক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এক সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলছেন, “২০১৭ সালে চ্যানেল আই রবীন্দ্র উৎসবে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। সেখানে আমিও ছিলাম। আজীবন সম্মাননা জানানোর মতোই ছিলেন তিনি। তাঁর এই অসময়ে চলে যাওয়া সত্যিই কষ্টের। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”
বাংলাদেশের আর এক বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অদিতি মহসিনও মিতা হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রয়াত শিল্পীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, “মিতা হক , বরেন্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। সকাল থেকে আমি অনেকটা স্তব্ধ । অসংখ্য স্মৃতি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শোকে!! কবে থেকে মিতা আপার সাথে আমার পরিচয় মনে নেই। কৈশোরে , স্কুল-কলেজ জীবনে তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয়। শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পর ব্যক্তিগত পরিচয়।কখনও কোন সংকীর্নতা তাঁর মধ্যে দেখিনি। ভাল কে ভাল , মন্দ কে মন্দ তিনি উচ্চস্বরে বলতেন। মিতা আপা শুধু সংগীতের চর্চা করেননি, তিনি সংস্কৃতির চর্চা করে গেছেন সারাজীবন !! প্রখ্যাত শিল্পী অনেকে হন , কিন্তু একাধারে অসাধারন গান ও অতি উচ্চ মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ খুব কম হয়। মিতা আপা তাঁদেরই একজন । ভাল থাকবেন মিতা আপা। আনন্দে – উচ্ছলতায় থাকবেন । যেমন আপনি সবসময় থেকেছেন। বিদায়!!”
প্রসঙ্গত, দুই বাংলার মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিলেন মিতা হক। মোট ২৪টি অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে তাঁর। এর মধ্যে ১৪ টি ভারত থেকে এবং ১০টি বাংলাদেশ থেকে।
Follow us on
Download News18 App

source

About AM Desk

Check Also

 নেতানিয়াহুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলিকে নিয়োগ ইরানের

Asia Monitor18 এক ইসরায়েলই নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সহ শীর্ষ ইসরায়েলই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!