Daily Archives: August 12, 2024

জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছে যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধ করছে..

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছেন যে কিয়েভের সেনাবাহিনী রাশিয়ার ভূখণ্ডে যুদ্ধ করছে। এটি ছিল কিয়েভের সারপ্রাইজ ক্রস-বর্ডার আক্রমণ যা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঘটেছে এবং যা ক্রেমলিনের জন্য একটি বড় অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে করা এক বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন প্রমাণ করছে যে তারা সত্যিই ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে জানে এবং ঠিক সেই চাপ তৈরি করছে যার প্রয়োজন – আগ্রাসীর ওপর চাপ।” তিনি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর “প্রত্যেক ইউনিটকে” ধন্যবাদ জানান যারা এই আক্রমণ সম্ভব করেছে।

ইউক্রেন আগেই সীমান্ত অঞ্চল বেলগোরোদে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং প্রো-ইউক্রেনীয় স্যাবোটাজ গ্রুপ সীমিত আক্রমণ পরিচালনা করেছে, কিন্তু কুরস্ক অপারেশন ছিল নিয়মিত ইউক্রেনীয় ও বিশেষ অপারেশন ইউনিটের প্রথমবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশের ঘটনা।

মস্কো এই আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে। রুশ কর্তৃপক্ষ কুরস্ক এবং অন্যান্য দুই সীমান্ত অঞ্চলে পাল্টা সন্ত্রাসবাদী অভিযান শুরু করেছে এবং কুরস্ক থেকে দশ লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।

রবিবার,  জেলেনস্কি বলেছিলেন যে রাশিয়ার বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন ধরিয়েছে। তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন যাতে একটি টাওয়ারের ওপর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়, এবং রাশিয়াকে দোষারোপ করেন, ইউক্রেনকে এবং পুরো ইউরোপ ও বিশ্বকে ব্ল্যাকমেল করার জন্য।

এখন ছয়দিনের মধ্যে, কুরস্কে আক্রমণটি দুই বছরের বেশি পুরনো সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আক্রমণের চমকপ্রদ প্রভাব স্পষ্ট: রবিবার পর্যন্ত, রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনীয় অগ্রগতি থামাতে এবং কিয়েভের সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করতে দেখা যাচ্ছে।

রাশিয়া রবিবার ইউক্রেনীয় আক্রমণ প্রতিহত করেছে এবং ১৪টি ড্রোন এবং ৪টি টোককা-ইউ ট্যাকটিক্যাল মিসাইল ধ্বংস করেছে, কুরস্ক অঞ্চলে ১৬টি ড্রোন, বেলগোরোদ অঞ্চলে তিনটি ড্রোন এবং ব্র্যানস্ক ও অরিওল অঞ্চলে একটি করে ড্রোন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার ভূখণ্ডে ৩০ কিমি (১৮.৬ মাইল) পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।

কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর রবিবার কর্তৃপক্ষকে দ্রুততম পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন। শনিবার পর্যন্ত, ৭৬,০০০-এরও বেশি মানুষ সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের বাড়ি ছেড়ে গেছে।রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ কুরস্ক, ব্র্যানস্ক এবং বেলগোরোদ অঞ্চলে “কাউন্টারটেরোরিস্ট অপারেশন রেজিম” চালু করেছে, যুদ্ধের অবস্থা বা সামরিক আইন ঘোষণা না করেই।

ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বলেছে, এটি সম্ভবত ক্রেমলিনের একটি প্রচেষ্টা যা আক্রমণকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বা প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত রাখার জন্য। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধের অবস্থা ঘোষণা করতে দ্বিধা করেছেন এবং সাধারণ সেনা নিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।

জেলেনস্কি রবিবার দাবি করেছেন যে রাশিয়া উত্তর কোরীয় KN-23 ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ইরানি তৈরি শেহাদ ড্রোন ব্যবহার করেছে, যদিও সিএনএন এই দাবি যাচাই করতে পারেনি।

মিসাইল আক্রমণের আগে কস্টিয়ানটিনিভকা শহরের একটি সুপারমার্কেটে হামলা চালিয়ে ১১ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছে।

জেলেনস্কি একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, “এই সপ্তাহেই রাশিয়ার বাহিনী ৩০টিরও বেশি মিসাইল এবং ৮০০-এর বেশি গাইডেড এয়ারিয়াল বোমা উৎক্ষেপণ করেছে।”

এটি ছিল ইউক্রেনীয় জনগণের জন্য একটি প্রাণঘাতী গ্রীষ্ম, জুলাই মাস ছিল অক্টোবর ২০২২ থেকে সবচেয়ে বেশি সাধারণ বেসামরিক হতাহত মাস। জাতিসংঘের মানবাধিকার মনিটরিং মিশন বলেছে যে, জুলাই মাসে অন্তত ২১৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১০১৮ জন আহত হয়েছে।

পাকিস্তানের অস্থিরতা কি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করবে?

চীন সরকারের বহুল আলোচিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এর অধীনে পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পাকিস্তানের এই অস্থিরতা চীনের এই মহাকাশীয় উদ্যোগে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে পাকিস্তানের ভূমিকা

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ একটি বৃহৎ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যা এশিয়া, ইউরোপ, এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ও পরিবহন নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) প্রকল্পটিও অন্তর্ভুক্ত, যা পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে গদার বন্দরকে সংযুক্ত করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাকিস্তানের অবকাঠামো এবং শিল্পক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন আশা করা হচ্ছে।

CPEC প্রকল্পটি পাকিস্তানের জন্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চীনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলকে আরও দ্রুত বাণিজ্যিক ও কৌশলগতভাবে সক্ষম করে তুলবে। তবে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অস্থিরতা চীনের এই বৃহৎ পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট

পাকিস্তান বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ, সন্ত্রাসবাদ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পাকিস্তানে বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক অসমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, চীনা প্রকল্পগুলোকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অসন্তোষও বাড়ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, চীনা প্রকল্পগুলো পাকিস্তানের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপকারে আসছে না, বরং তাদের জমি ও সম্পত্তি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি করছে।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড এবং সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে, CPEC প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চীনা নাগরিক এবং প্রকল্পগুলোকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তার এই অবনতির কারণে চীনের বিনিয়োগ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমে যেতে পারে।

চীনের কৌশলগত ভাবনা

পাকিস্তানের অস্থিরতার ফলে চীন কৌশলগতভাবে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করছে। চীন ইতিমধ্যে পাকিস্তানে নিজেদের প্রকল্পগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সামরিক এবং নিরাপত্তা সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে এই অস্থিরতা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং CPEC প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর। চীনের জন্য পাকিস্তানের অস্থিরতা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা চীনের বৃহৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার পথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য পাকিস্তানের অস্থিরতা একটি কঠিন পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চীনকে সম্ভবত আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ এবং CPEC প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন সময়ের হাতে, যা শুধু পাকিস্তানের অস্থিরতা নিরসনের ওপরই নয়, বরং চীনের কৌশলগত ও কূটনৈতিক দক্ষতার ওপরও নির্ভর করছে।

চীনের তিব্বতের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রচেষ্টা হান জনগোষ্ঠীরই লাভ, তিব্বতিদের জন্য বঞ্চনা, রিপোর্টে উল্লেখ

চীনের তিব্বত অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় হান জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বলে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিব্বতের আদি বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, এবং অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে ক্রমশ বঞ্চিত হচ্ছে।

চীনের তিব্বতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ

তিব্বত, চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যা ঐতিহাসিকভাবে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রস্থল। চীন সরকার তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রসার, এবং পর্যটন খাতের উন্নয়ন।

চীনের সরকার এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে তিব্বতের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে প্রচার করে আসছে। তারা দাবি করছে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে তিব্বতের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

হান জনগোষ্ঠীর লাভবান হওয়া

তবে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সুবিধাভোগী মূলত হান জনগোষ্ঠী, যারা চীনের বৃহত্তম জাতিগত গোষ্ঠী। তিব্বতের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সেখানে বিপুলসংখ্যক হান জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে, যারা এসব প্রকল্পের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।

হান জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরির বাজারে তিব্বতিরা খুব কমই সুযোগ পাচ্ছেন। তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও পশুপালনের জায়গায় নতুন ধরনের শিল্প ও ব্যবসার প্রচলন হচ্ছে, যা হান জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সাহায্য করছে, কিন্তু তিব্বতিদের জন্য তা বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তিব্বতিদের বঞ্চনা ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি

এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিব্বতিদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তিব্বতিদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ক্রমশ ধ্বংসের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে, তরুণ তিব্বতিরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ও জীবনযাত্রা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন প্রকল্পে খুব কমই অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে, তিব্বতিদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হয়ে বরং তারা আরও পিছিয়ে পড়ছে। অনেক তিব্বতি তাদের জমি এবং সম্পত্তি হারাচ্ছেন, যা তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

তিব্বতে চীনের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় তিব্বতিরা যে বঞ্চিত হচ্ছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। তিব্বতের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, তিব্বতিদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি তিব্বতিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়, তবে চীন সরকারকে এই প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

চীন-আমেরিকার ঠান্ডা যুদ্ধ: হাসিনার প্রস্থানে ভেস্তে গেল চীনের বঙ্গোপসাগর দখলের স্বপ্ন, আমেরিকার আসল কৌশল কী?

বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে চীন ও আমেরিকার ঠান্ডা যুদ্ধ একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চীন যেখানে একের পর এক কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে আমেরিকা সমানভাবে পাল্টা কৌশল গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এই প্রস্থান চীনের বঙ্গোপসাগর দখলের স্বপ্নে এক বিশাল ধাক্কা দিয়েছে।

চীনের বঙ্গোপসাগর দখলের কৌশল

চীনের অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটা দ্রুত গতিতে। এশিয়ার অন্যতম কৌশলগত অঞ্চল বঙ্গোপসাগরকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসতে চীন বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর নির্মাণ এবং সামরিক সহায়তা। চীন আশা করেছিল, বাংলাদেশের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের উপর তাদের প্রভাব বাড়িয়ে তারা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

শেখ হাসিনা সরকার চীনের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যা চীনের এই স্বপ্নকে আরও বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু হাসিনার প্রস্থানের পর সেই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আমেরিকার পাল্টা কৌশল

চীনের এই সম্প্রসারণকে মোকাবিলা করার জন্য আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করার চেষ্টা করছে। হাসিনার প্রস্থানের পর আমেরিকা দ্রুতই তাদের কৌশলগত অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আমেরিকা বুঝতে পেরেছে, বঙ্গোপসাগরে চীনের আধিপত্যকে প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করা জরুরি।

আসলে, আমেরিকার কৌশল হলো চীনকে একঘরে করে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। তারা ইতিমধ্যে ভারত এবং জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যা চীনের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমেরিকা মনে করছে, বাংলাদেশকে তাদের কৌশলগত বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে, চীনের বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তার করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব

শেখ হাসিনার প্রস্থান চীন এবং আমেরিকার ঠান্ডা যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। হাসিনার প্রস্থানের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নতুন নেতৃত্ব কীভাবে চীন এবং আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব কি চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখবে, নাকি আমেরিকার সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলবে? এশিয়ার ভৌগোলিক ও কৌশলগত মানচিত্রে এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে, চীন ও আমেরিকার ঠান্ডা যুদ্ধের ফলাফল এশিয়া এবং বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। হাসিনার প্রস্থান চীনের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হলেও, চীন এখনও নতুন কৌশল খুঁজছে। অন্যদিকে, আমেরিকা তাদের কৌশল সফল করতে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চাইবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি এই ঠান্ডা যুদ্ধের মোড় কোনদিকে ঘুরিয়ে দেবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে কৌতূহল ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। চীনের বঙ্গোপসাগর দখলের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পারে, কিন্তু আমেরিকার আসল কৌশল এবং এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও অনেক অজানা প্রশ্ন রয়েছে।

error: Content is protected !!