Monthly Archives: July 2024

বহু ধনী ব্যবসায়ী চীন ছেড়ে বসতি জমাচ্ছেন মার্কিন মুলুকে, কেন?

সম্প্রতি বহু ধনী ব্যবসায়ী চীন ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাসা বাঁধছেন। এই অভিবাসনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চীনের কঠোর নিয়মনীতি, উচ্চ কর, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে চিহ্নিত করছেন।

বিগত কয়েক বছরে চীনের অর্থনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন এসেছে এবং সরকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বিশেষ করে, প্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতে নতুন বিধিনিষেধ এবং উচ্চ করের বোঝা ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, বেইজিংয়ের কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে।

একজন ধনী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জানান, “চীনের বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশ উদ্বেগজনক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ রয়েছে।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমানের জীবনযাত্রা, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, এবং বিনিয়োগের আরও ভালো সুযোগ থাকার কারণে অনেক ধনী ব্যবসায়ী সেখানে স্থানান্তরিত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধনী ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এতে দেশটি উচ্চমানের ব্যবসায়িক মেধা এবং বিনিয়োগ হারাবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই স্থানান্তর থেকে উপকৃত হতে পারে, কারণ এটি নতুন বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করবে।

এছাড়াও, চীনের সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ এবং লকডাউনও অনেক ধনী ব্যবসায়ীকে তাদের দেশ ত্যাগ করার জন্য প্রভাবিত করেছে। এতে স্পষ্ট যে, ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে চীন ছেড়ে নিরাপদ এবং আরও উদার অর্থনৈতিক পরিবেশের খোঁজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

ট্রাম্প হত্যা প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে পুতিনের বিবৃতি

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনের ওপর হামলার পর তাকে ফোন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও বলেন, মস্কো “যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতাকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা করে” এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দর্শকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

শনিবার পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে ট্রাম্পের প্রচার সমাবেশে একাধিক গুলি চালানো হয়, যেখানে ট্রাম্পের ডান কান গুলি লেগে যায়, একজন দর্শক নিহত হন এবং আরও দুইজন গুরুতর আহত হন। গোপন সেবা কর্মীরা ট্রাম্পকে দ্রুত মঞ্চ থেকে সরিয়ে একটি “নিরাপদ” স্থানে নিয়ে যায়। পরে কর্তৃপক্ষ জানায় যে ২০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন হামলাকারী, যিনি নিকটস্থ একটি ছাদ থেকে গুলি চালান, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

রবিবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে পেসকভ জোর দিয়েছেন যে ক্রেমলিন বিশ্বাস করে না যে বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের ওপর হামলার পেছনে ছিল। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে “এই প্রশাসন দ্বারা সৃষ্ট রাজনৈতিক লড়াইয়ের পরিবেশ… ট্রাম্পকে ঘিরে আমেরিকার মুখোমুখি হওয়া অবস্থায় নিয়ে এসেছে।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র আরও আশা প্রকাশ করেছেন যে এই ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।পেসকভ আরও বলেন, “বর্তমান প্রশাসনের স্টাইল এমন যে তারা সমস্ত বিষয়কে শক্তির অবস্থান থেকে সমাধান করতে পছন্দ করে, বিশেষত আন্তর্জাতিক বিষয়ে। কেউ কখনও আপোসের চেষ্টা করে না।”এখন, এটি মূলত দেশটির ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছে,” রাশিয়ান কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

“বিচারিক সরঞ্জাম, আদালত, প্রসিকিউশন এবং প্রার্থীকে রাজনৈতিকভাবে অবমাননা করার চেষ্টা সহ ট্রাম্পকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে অপসারণের অনেক প্রচেষ্টার পরে, সমস্ত বাহ্যিক পর্যবেক্ষকের কাছে এটি স্পষ্ট ছিল যে তার জীবন বিপন্ন।”

পেসকভ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সহিংসতার দিকে উস্কানির জন্য দায়ী করেছেন, যেহেতু দেশের ইতিহাসে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে।

হামলার পরপরই, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে “আমেরিকায় এই ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।” এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ. বুশ এবং বারাক ওবামাও তাদের বিবৃতিতে একইভাবে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং গোপন সেবা কর্মীদের দ্রুত হস্তক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট আমেরিকান রাজনীতিবিদ এবং বিদেশি নেতাও রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।

ফিলিপিন্সের নৌসেনার নৌকার ক্ষতি, চীনের কাছে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি ম্যানিলার

ম্যানিলা: দক্ষিণ চীন সাগরে সংঘর্ষের ফলে ফিলিপিন্সের নৌসেনার একটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর চীনের কাছে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ফিলিপিন্স। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ঘটনার বিবরণ
ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলে একটি চীনা কোস্ট গার্ডের জাহাজের সঙ্গে ফিলিপিন্সের নৌসেনার নৌকার সংঘর্ষ ঘটে। এতে ফিলিপিন্সের নৌকাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নৌকাটির আরোহী কয়েকজন সামান্য আহত হন। ঘটনাটি ঘটার পরপরই ফিলিপিন্স সরকার চীনের প্রতি ক্ষতিপূরণ দাবি করে।

ফিলিপিন্সের প্রতিক্রিয়া
ফিলিপিন্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিওডোরো লোকসিন জুনিয়র বলেছেন, “আমরা চীনকে এই ঘটনায় দায়ী মনে করি এবং তাদের কাছ থেকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। আমরা আশা করি চীন তাদের দায়িত্ব স্বীকার করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।”

চীনের প্রতিক্রিয়া
চীনা কর্তৃপক্ষ এখনো এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে চীনের সরকারের পক্ষে এই ধরনের দাবি মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চীন দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ চীন সাগরের বৃহৎ অংশের উপর তাদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে, যা ফিলিপিন্স এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সংঘাতের মূল কারণ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান উভয়েই ফিলিপিন্সের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং চীনের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা এই অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ফিলিপিন্সের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।”

বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলবে। চীন এবং ফিলিপিন্স উভয়েরই এই অঞ্চলে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলতে পারে।

উপসংহার
ফিলিপিন্সের নৌসেনার নৌকার ক্ষতি এবং চীনের কাছে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি দক্ষিণ চীন সাগরের বর্তমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার সমাধান কীভাবে হবে এবং চীন কী পদক্ষেপ নেবে তা এখন দেখার বিষয়। তবে এই ধরনের সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে চীনা অ্যাপের ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে নাগরিকরা, স্ক্যামের জাল ছড়াচ্ছে দেশ জুড়ে প্রেক্ষাপট

প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী অ্যাপের ব্যবহার বেড়ে গেছে, যা নাগরিকদের জন্য মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের তাত্ক্ষণিক ঋণ প্রদান করে, কিন্তু উচ্চ সুদের হার এবং কঠোর শর্তাবলীর কারণে অনেকেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছেন। তাছাড়া, এই অ্যাপগুলো স্ক্যাম এবং প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে বিপদে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ।

অ্যাপগুলোর প্রলোভন

চীনা এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী অ্যাপগুলো সাধারণত সহজলভ্য ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাত্ক্ষণিক ঋণ পেতে পারেন, যা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়া মানুষদের জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখন, যখন ঋণগ্রহীতা এই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েন এবং তাদের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।

উচ্চ সুদের হার ও কঠোর শর্তাবলী

এই অ্যাপগুলো সাধারণত অত্যন্ত উচ্চ সুদের হার প্রযোজ্য করে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে সুদের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায় এবং ঋণগ্রহীতারা আরো বেশি সমস্যায় পড়েন। এছাড়া, এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাদের সম্মতি ছাড়াই তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন।

স্ক্যাম ও প্রতারণার জাল

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই অ্যাপগুলো স্ক্যাম এবং প্রতারণার মাধ্যমেও ব্যবহারকারীদের বিপদে ফেলে। ব্যবহারকারীরা যখন ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হন, তখন তাদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপগুলো ঋণ প্রদান না করেই ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক মানুষই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরকারের উদ্যোগ

বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যা সমাধানে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই ধরনের অ্যাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে, সচেতনতা বাড়ানো এবং সাধারণ মানুষকে এই ধরনের প্রতারণার থেকে রক্ষা করার জন্য আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

করণীয়

সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে এই ধরনের অ্যাপের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

কঠোর নিয়ন্ত্রণ: সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের অ্যাপের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিকল্প ঋণ ব্যবস্থা: ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ঋণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। এতে সাধারণ মানুষ সহজেই ঋণ পেতে পারেন এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি কমবে।

উপসংহার

চীনা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে অনেক বাংলাদেশী নাগরিক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্ক্যাম এবং প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে তারা বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানে সরকার এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, টি-শার্টে সেই ঘটনার ছবি ছাপিয়ে দেদার ব্যবসা চীনে

বেইজিং: ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর স্নাইপার শুটিংয়ের ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চীনে সেই ঘটনার ছবি ছাপানো টি-শার্ট বিক্রি শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ব্যবসা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

গত শনিবার বাটলার, পেনসিলভানিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের র‍্যালিতে ২০ বছর বয়সী থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস প্রায় ১৫০ গজ দূর থেকে অসংখ্য রাউন্ড গুলি চালান, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে আহত করে এবং একজন স্থানীয় দমকলকর্মীকে হত্যা করে। এই ঘটনার পরপরই চীনে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সেই ঘটনার ছবি সহ টি-শার্ট বিক্রি শুরু হয়।

এই টি-শার্টগুলোতে শ্যুটিংয়ের সময়ের ছবি এবং বিতর্কিত শ্লোগান ছাপানো হয়েছে। চীনের কিছু ব্যবসায়ী এই ঘটনাকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং ব্যাপকভাবে এই পণ্যগুলি প্রচার করছেন। চীনের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে এই টি-শার্টগুলি দ্রুত বিক্রি হচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক শেয়ার ও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি মানবিকতা এবং শালীনতার পরিপন্থী। একজন মার্কিন সিনেটর বলেছেন, “এটি একটি নিন্দনীয় ঘটনা এবং মানবিক মর্যাদার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

চীনের সরকার এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এই ধরনের ঘটনার ছবি ব্যবহার করে ব্যবসা করার প্রবণতা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ট্রাম্পের সমর্থকরাও এই ব্যবসার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং চীনের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “এটি একটি সংবেদনশীল বিষয় এবং এই ধরনের কাজ আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করে। আমরা এই ব্যবসার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

এই ঘটনার পর থেকে চীনে টি-শার্ট বিক্রি অব্যাহত রয়েছে এবং এ নিয়ে বিতর্কও তুঙ্গে রয়েছে।

চীন ও রাশিয়ার যৌথ মহড়া চলছে

Asia Monitor18 চীনের সাথে রাশিয়ার যৌথ মহড়া চলছে। চীন গত শুক্রবার জানিয়েছে, তারা চীনের দক্ষিণ উপকূলে রাশিয়ার সাথে যৌথ সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। চীন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ‘সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা  রক্ষার উদ্দেশ্যে যৌথভাবে দুই পক্ষের সংকল্প ও সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য’ দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের ঝানপজিয়াং শহরের আশেপাশের জল ও আকাশ সীমায় এই মহড়া চলছে।

চীনের এই ঘোষণা আসার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বৈঠকের পর এবং জাপান মস্কোর সাথে বেইজিংএর  দৃঢ় সম্পর্কের ক্রমে বেড়ে যাওয়া হুমকির বিষয়। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছেন, দুই দেশের সামরিক বাহিনী চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে জয়েন্ট সি- ২০২৪ নামের এই মহড়া শুরু করেছে। বলা হয়েছে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে এই মহড়া। আরও বলা হয়েছে যে এই মহড়া নতুন যুগের জন্য চীন- রাশিয়া মিশ্রিত কৌশলগত অংশিদারিত্ত কে আরও সুগভীর করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন ও রাশিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং তাদের বন্ধুত্তের কোন সীমা নেই বলে তারা দাবি করে। ন্যাটোর সাথে উভয় দেশেরই বৈরি সম্পর্ক রয়েছে। ন্যাটো নেতারা বলেন, চীন ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের চূড়ান্ত সহায়তাকারী হয়ে উঠেছে। উত্তরে বেইজিং  ন্যাটোকে সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।

অন্যদিকে চীন জানিয়েছে, তারা ইউক্রেন সংঘাতের কোন পক্ষেই নেই তবে রাশিয়াকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দেওয়ার জন্য পশ্চিমা নেতারা চীনের সমালোচনা করছে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তে রাশিয়ার আরেক মিত্র বেলারুশের সাথে চলতি সপ্তাহে মহড়া চালাচ্ছে চীন।

আগামী কিছু বছরের মধ্যে ভারত হতে পারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ!RBI ডেপুটি গভর্নর

Asia Monitor18 রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি গভর্নর মাইকেল ডি পাত্রর মতে অপেক্ষা আর বেশিদিনের নয়। হ্যাঁ অর্থাৎ ২০৪৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না ভারতকে। তার অনেক আগেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ভারত। তিনি এও বলেছেন যে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পৌঁছে আর্থিক বৃদ্ধির দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাতে রয়েছে ভারত। যদিও লক্ষ্য অবধি পৌঁছাতে গেলে ভারতকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে। মাইকেল ডি পাত্রর এইরূপ মন্তব্য বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে।

মুসউরির ‘লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ত্রেশনের’ একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়ে আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নর বলেন আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত। বলা যায় ভারত ২০৩১ সালের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পৌঁছতে পারে। ভারত মার্কিন অর্থনীতিকেও পিছনে ফেলে দিতে পারে। তার কথায় ২০৬০ সালের মধ্যে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর জন্য উৎপাদন এবং পরিকাঠামোতে উন্নতির প্রয়োজন।

দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার যদি ৯.৬ শতাংশ পৌঁছায় তবে ভারত নিম্ন ও মধ্য আয়ের গণ্ডি পেরোতে পারবে। সেক্ষেত্রে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে সমস্যা হবে না ভারতের। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলির মাথাপিছু আয়ে ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্তমানে পিপিপি এর নিরিখে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হল ভারত। বিশেষজ্ঞদের দাবি ভারতের এই আর্থিক বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ জনসংখ্যা। বর্তমানে এদেশের ৬৫ শতাংশ বাসিন্দার বয়স ৩৫ বছরের কম।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুনরায় গ্রেপ্তার ইমরান খান ও বুশরা বিবি

Asia Monitor18 আইনি সমস্যা যেন পিছু ছাড়তেই চাইছেনা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির। কোন না কোন কারণে তারা অভিযুক্ত। শনিবার (১৩ জুলাই) সংরক্ষিত আসন নিয়ে পিটিআইয়ের পক্ষে রায় দেয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে বেকসুর খালাস দেন পাকিস্তানের একটি আদালত। তবে এই আনন্দ তাদের দীর্ঘস্থায়ী নয়। তবে ওই রায়ের কিছুক্ষণ পরই রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার বিক্রির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়।পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, আদিয়ালা জেলের ৩ নম্বর গেট দিয়ে ছাড়া পাওয়ার সময় বুশরা বিবিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।আর ইমরান খানকে জেলের মধ্যেই পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বুশরা বিবিকে বিয়ে করেছিলেন ইমরান খান। অনুষ্ঠানে বুশরা বিবির মা,বন্ধু-বান্ধবসহ কাছের আত্মীয় পরিজনরা উপস্থিত ছিলেন। গত বছর বুশরার সাবেক স্বামী খাওয়ার মানেকা  আদালতে অভিযোগ জানান, ইমরান ও বুশরার বিয়েটি অবৈধ ও শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে তাদের বিয়ে বেআইনি বলে প্রমাণিত হওয়ার পর বিচারিক আদালত তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে পাঁচ লাখ রুপি করে জরিমানা করেছিলেন।

বুশরার তিন মাসের ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই এ বিয়ে হয়েছে। পাশাপাশি মানেকা তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগও এনেছিলেন।শনিবার ২৮ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বুশরা বিবির সাবেক স্বামী খাওয়ার মানেকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে নিকাহ ও ব্যভিচারের অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

বিরক্ত হয়ে কোটা বাদ দিয়েছিলাম, কী হয় দেখার জন্য: সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা

২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একবার এ ধরনের আন্দোলন করল। শুধু আন্দোলন না, আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতরে বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছাড়ল। এগুলো দেখে বিরক্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয়?’ গত রবিবার গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একবার তারা আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত ইত্যাদি করতে শুরু করল। জ্ঞানী-গুণীরাও ঘরে বসে অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিল। এসব দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন এক পর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা। এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশিদূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে ফরেন সার্ভিসে দুইজন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চারজন। কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন। মামলার পর যখন কোর্ট রায় দেন, সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন ফরেন সার্ভিসে দুজন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চারজন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি।’

বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ শতাংশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে, তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো, সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনো দিন ভাবেনি। এমনকি কোথায় পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি, ডিসি-এসপি-ওসিসহ সকল জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করব, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলত, কোথাও না কোথাও চাকরি করত। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেই সব মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ যেন চাকরি পায়, তাই এই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা নেন। ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি বা প্রশাসন বা কোথাও। ৪২ বিসিএসে বিশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মামলার পরে কোর্ট কোনো রায় দিলে সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তাঁরা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কী তাঁরা চিনবেন না। একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে, একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই। কোনো জ্ঞানই নাই। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে। তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনা কী ধরনের কাজ হয়, সেটা কী তাদের জানা আছে। ধারণা তো দেখি না।

‘যখন আদালতে চলে গেল। সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। সেটি না করে, তারা রাজপথে সমাধান করবে। আমাকে বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না, সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না, কিছুই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।

‘রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায়—তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল। যে কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে?’

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন—প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা না পেলে, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না? অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

গত রোববার (১৪ জুলাই) দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আহতরা হলেন-ইংরেজী বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির, রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব ও গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম।তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে- অভিযোগ এনে রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি ছাত্রী হলের দিকে গেলে দুই’শ থেকে তিন’শ ছাত্রী এতে যোগ দেন। পরে মিছিলটি ছাত্রীদের আবাসিক হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে যায়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার, রাজাকার’, ‘মেধা না কোটা/ মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। হামলায় আহত শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব অভিযোগ করেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। এর মধ্যে আমরা খবর পাই, মিছিলে আসতে আগ্রহী হলের কিছু ভাইকে ছাত্রলীগ আসতে বাধা দিচ্ছে। তাই আবাসিক ছাত্র হল অভিমুখে গেলে পথিমধ্যে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের মিছিলে বাধা দেয়। একপর্যায়ে তাঁরা হামলা করে।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সবার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, তা দেখলেই বুঝা যাবে। বরং আমরা সড়কের পাশে গিয়ে তাঁদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। কেউ আহত হয়েছে কিনা, শিক্ষার্থীরা এমন কোনো বিষয়ে জানাননি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত।’

error: Content is protected !!