Monthly Archives: June 2024

দুর্নীতি তদন্তের আওতায় তিব্বতের প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা

তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রাক্তন কমিউনিস্ট পার্টি সচিব উ ইয়িংজি, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের জন্য তদন্ত করা হচ্ছে যা সাধারণত দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। চীনের দুর্নীতি দমন সংস্থা এই তদন্তের কথা সামনে আনেন।

তিনি বর্তমানে জাতীয় উপদেষ্টা সংস্থা, চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স (সিপিপিসিসি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং পূর্বে পার্টির তিব্বত ইউনিটের সেক্রেটারি ছিলেন। তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২২ সালে, ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট তিব্বতে তার নীতির জন্য ৬৭ বছর বয়সী উ-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যা “বিচারবহির্ভূত হত্যা, শারীরিক নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং গণ আটক” সহ তিব্বতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল।

এছাড়াও জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, জোরপূর্বক গর্ভপাত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ এবং বন্দীদের নির্যাতন।

সেন্ট্রাল কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশন এবং ন্যাশনাল সুপারভাইজরি কমিশন ১৬ জুন তদন্তের কথা ঘোষণা করেছে। তদন্তাধীন অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সাংহাই আইনসভার প্রধান ডং ইউনহু; সান ঝিগাং, একজন প্রাক্তন চিকিৎসা সংস্কার কর্মকর্তা; হান ইয়ং, চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের শানসি প্রাদেশিক কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান; তাং ইজুন, সাবেক বিচারমন্ত্রী; তাং রেনজিয়ান, কৃষিমন্ত্রী; এবং লি ইউফেং, তাইওয়ান ডেমোক্রেটিক সেল্ফ গভর্নমেন্ট লিগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী ভাইস-চেয়ারম্যান।

উ ইয়িংজির গ্রেপ্তারের খবরে তিব্বতিরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন। একজন বলেছিলেন, “এটি তিব্বতিদের জন্য ভাল খবর।” অন্যজন মন্তব্য করেছেন, “এই তিব্বতের শত্রু আটক হওয়ায় তিব্বতিরা উপকৃত হবে।”

তিব্বতের অভ্যন্তরে থাকা একটি সূত্র জানায়, উ ইয়িংজির কঠোর নীতিমালার কারণে তিব্বতিরা সামাজিক মাধ্যমে তাকে তীব্র সমালোচনা করছেন। একজন তিব্বতি অধিকার বিশ্লেষক সাঙ্গায় কিয়াপ বলেছেন, “চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের এই তদন্ত তিব্বতের পরিস্থিতিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।”

উ ২০১৬ সালে পার্টি সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর, তিনি দলাই লামাকে “সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ এবং সমালোচনা” করার আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিব্বতি সংস্কৃতি এবং ভাষাকে হ্রাস করার জন্য চীনা ভাষায় ভিত্তিক শিক্ষাপ্রণালী চালু করেন।

তিব্বতের প্রাক্তন উপদেষ্টা, জিয়াং জি, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম পিপলস প্রসিকিউটরেটের মতে, জিয়াং তার বিভিন্ন পদ ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা অর্জনের জন্য ঘুষ গ্রহণ করেছেন।

একই সময়ে, জিনজিয়াংয়ের প্রাক্তন উপ-সচিব, লি পেংক্সিন, পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এবং সরকারি পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। তদন্তে জানা গেছে, লি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করেছেন।

লি যখন জিনজিয়াংয়ের উপ-সচিব ছিলেন, তখন তিনি উইঘুর শিক্ষাবিদদের ওপর কঠোর দমন চালান। বিশিষ্ট উইঘুর পণ্ডিত তাশপোলাত তেইপের অপসারণের পর, তাকে জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়।

এই ঘটনাগুলি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসনব্যবস্থার কঠোর দিকটি তুলে ধরেছে। তিব্বত এবং জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ফিলিপাইন-চীন সংঘাত: ফিলিপাইনের দাবি,‘শুধুমাত্র দস্যুরাই এমন কাজ করে’

ফিলিপাইন চীনের কোস্ট গার্ডের বিরুদ্ধে দক্ষিণ চীন সাগরে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে “নৃশংস হামলা” চালানোর অভিযোগ এনেছে। ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, চীনা কোস্ট গার্ডের সদস্যরা কুঠার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সদস্যদের রাবারের নৌকায় আক্রমণ করছে এবং নৌকাটি কেটে ফেলে। ম্যানিলা এই ঘটনাকে “সাহসী আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছে।

এই সংঘর্ষটি স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের সেকেন্ড থমাস শোলের কাছে ঘটেছে, যেখানে ফিলিপাইনের নৌবাহিনী তাদের সৈন্যদের সরবরাহ প্রদান করছিল। এই সংঘর্ষটি দক্ষিণ চীন সাগরের সম্পদসমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ উদাহরণ।

চীন পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর “অবিসংবাদিত সার্বভৌমত্ব” দাবি করে, যেখানে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ম্যানিলা, প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি জানায়। সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক কলিন কোহ বলেন, চীনের সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর জাহাজে চড়ে বসার ঘটনা নজিরবিহীন।

ফিলিপাইনের সামরিক কর্মকর্তারা জানান, চীনা কোস্ট গার্ড ফিলিপাইনের রাবারের নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে, সাতটি বন্দুক লুট করে, মোটর এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম ধ্বংস করে এবং ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এই সংঘর্ষে ফিলিপাইনের একজন নাবিক তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল হারান।

চীনা কোস্ট গার্ড টিয়ার গ্যাস, স্ট্রোব লাইট এবং সাইরেন ব্যবহার করে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে তোলে। ফিলিপাইনের সামরিক প্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনর বলেন, “শুধু জলদস্যুরাই এমন কাজ করে।”

বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ফিলিপাইনের অপারেশন মানবিক সহায়তার জন্য ছিল না, বরং তারা অস্ত্র ও নির্মাণ সামগ্রী বহন করছিল এবং ইচ্ছাকৃতভাবে চীনা জাহাজে হামলা চালায়।

দক্ষিণ চীন সাগরে ঘটে যাওয়া ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফিলিপাইনের একটি মিউচুয়াল ডিফেন্স চুক্তি রয়েছে, যা একে অপরের ওপর আক্রমণ হলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার চীনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ফিলিপাইনের পাশে আছে।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনরিক এ. মানালোকে জানান, “চীনের এই কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করে।”

এই সংঘর্ষটি চীনের নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর প্রথম ঘটনা, যা চীনা কোস্ট গার্ডকে বিদেশী জাহাজ আটক এবং ক্রুদের বিচার ছাড়াই ৬০ দিন পর্যন্ত আটক করার অনুমতি দেয়। এই ঘটনাটি মার্কিন-ফিলিপাইন মিত্রতার একটি পরীক্ষা এবং এটি উভয় দেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সক্রিয় করতে পারে।

তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষতি

সিচুয়ান প্রদেশের একটি তিব্বতি-জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ঘন কর্দমাক্ত জলের নদীগুলির স্রোত  সম্প্রদায়গুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই ঘটনায় দুই পর্যটক নিখোঁজ এবং বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানিয়েছে যে পর্বতবেষ্টিত ন্যাগচু কাউন্টিতে আরও অনেক মানুষ নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহের শেষে  ঘটে যাওয়া বন্যা এবং ভূমিধস বহু মানুষকে অবাক করেছে। একজন স্থানীয় সূত্র আরএফএকে জানিয়েছে, “অনেকেই এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত ছিল না।”

বন্যার ফলে রাস্তাগুলি কাদায় ঢেকে যায় এবং কিছু গাড়ি ও ট্রাক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পড়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে দুর্গম পার্বত্য এলাকা  হওয়ায় উদ্ধার কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

ন্যাগচু কাউন্টি – ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় ইয়াজিয়াং নামে পরিচিত – কারদজে তিব্বতী স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে অবস্থিত, যা ঐতিহ্যবাহী খাম অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, এবং স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের বাড়িঘর ও সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, “আমরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তাছাড়া, রাস্তাঘাট পুনঃনির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো ত্রাণ সামগ্রী এবং সাহায্য প্রদান করছে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আবারো ইরানের ভিত নাড়িয়ে দিল ভূমিকম্প

Asia Monitor18 ইরানের উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়ে একটি ভূমিকম্প হয়েছে। এই ভূমিকম্পে প্রায় ১২০ জন আহত এবং ৪ জন মারা গেছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৪.৯।মঙ্গলবার রাতে হওয়া এই ভূমিকম্পে কাশমার নামক শহরটিতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে যানা গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের রাস্ত্রয়ত্ত টেলিভিশনে দেখা গেছে ভূমিকম্পের পর একটি রাস্তায়ে জরুরী বিভাগের কর্মীরা কাজ করছে এবং দেখা গেছে সেখানকার সব ভবনগুলো ভেঙে ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তরফ থেকে যানা গেছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। কাশ্মারের গভর্নর হাজাতুল্লা শরিয়তমাদারি ইরানের রাস্ত্রয়ত্ত টেলিভিশনে বলেছেন, স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ২৪ মিনিটে এই ভূমিকম্পটি হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের ফলে কাশ্মারের শহর ও আশেপাশের এলাকার জীর্ণ বা অর্ধভগ্ন ভবনগুলি প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত জানা যাইনি। আহতদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান যে ৩৫ জন আহত কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইরান দেশটির সীমা অনেকগুলি টেকটনিক প্লেটে ছড়িয়ে থাকার ফলে এটি একটি ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এখানে প্রায় হটাত হালকা ও মাঝারি ভূমিকম্প দেখা যায়ে। ভারী এবং ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিকম্পও লক্ষ্য করা যায়ে। গেল বছরের প্রথমে তুরস্কের সীমান্তের কাছে উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলে পার্বত্য এলাকায়ে ৫.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে দেখা গিয়েছিল ৩ জন মারা গিয়েছিল এবং ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। ইরানের ভূমিকম্পের ইতিহাসে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসকারী ভূমিকম্পের মধ্যে একটি হল ২০০৩ সালের ভূমিকম্প। ৬.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলীয় বাম শহরের ৩১ হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছিল।

এছাড়াও ২০১৭ সালে এই দেশের পশ্চিম অঞ্চলে একটি ভূমিকম্পে ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। এই ভূমিকম্প মাত্রার তীব্রতা ছিল ৭ মাত্রা। এই ঘটনা বারবার ঘটার ফলে ইরান নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

কিম ও পুতিনের একে অপরকে উপহার প্রদান  

Asia Monitor18 বিশ্বে উত্তর কোরিয়ার মিত্র দেশের সংখ্যা হয়তো হাতে গুনলেই পাওয়া যাবে। তবে দেশটির দুই প্রধান মিত্র বিশ্ব রাজনীতির দুই প্রভাবশালী দেশ রাশিয়া ও চিন। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ার সফর শুরু করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।নিজের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে উত্তর কোরিয়া পাড়ি দিয়েছেন পুতিন। বুধবার ১৯শে জুন পুতিন দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ং পৌঁছান। জানা গেছে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে পুতিন এই সফরে গিয়েছেন।

অন্যদিকে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, দুটি দেশের মধ্যে১৯৬১,২০০০,২০০১ সালে যেসব চুক্তি হয়েছে নতুন চুক্তিটি সেগুলির স্থলাভিষিক্ত হবে। পুতিন জানিয়েছেন, আমাদের মধ্যে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসা ছাড়াও রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক ও নিরাপত্তা চুক্তিও রয়েছে। পুতিন এই চুক্তিকে একটি ‘ব্রেক থ্রু’ হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে কিম জিং উন এটিকে ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিমান বন্দর থেকে নামার পর উত্তর কোরিয়ার উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়ার সরকার প্রধান নানান প্রকৃতিতে সেজে উঠেছে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী। পিয়ংইয়ং  কেন্দ্রস্থলে পুতিনকে স্বাগত জানিয়ে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কিম জিং উন। রঙবেরঙের পোশাক পরে পুতিনকে স্বাগত জানিয়েছে হাজার হাজার কোরিয়ান বাসিন্দা।

অনুষ্ঠানের পর্ব মিটলে পুতিন ও কিম জিং উন একে অপরকে উপহার প্রদান করেন। পুতিন কিম জিং উন কে রাশিয়ার বিলাসবহুল অরাস ব্র্যান্ডের লিমুজেন গাড়ি, অ্যাডমিরাল ছোরা, ও একটি টি সেট উপহার দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ। নতুন গাড়িতে তাদের দুইজনকে একসাথে ছবি তুলতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কিম পুতিনকে শিল্পকর্ম উপহার দিয়েছে যা পুতিনকে নিয়ে বানান। জানা গেছে আগের মাসে পুতিন কিম কে আরও একটি উপহার দিয়েছে তবে তা কোন মডেলের গাড়ি তা জানা যাইনি। তবে এইটুকু জানা গেছে কিম একজন গাড়ি প্রেমী মানুষ।

আরও একটি জাহাজডুবি হুতিদের মাধ্যমে

Asia Monitor18 ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতিদের সামরিক বাহিনী লোহিত সাগরে ‘ টিউটর’ নামের ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট আরেকটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে বলে গত মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশান (ইউকেএমটিও)। গত ১২ জুন লোহিত সাগরে হুতি নিয়ন্ত্রিত হএইদা বন্দরে প্রায় ৬৬ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ- পশ্চিমে গ্রিসের মালিকানাধীন কয়লাবাহি টিউটর জাহাজ ডুবিয়ে দেয় হুতিরা।

ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ভর্তি নৌকার আঘাতে জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জাহাজে জল উঠতে শুরু করে ও এক সপ্তাহ পর জাহাজটি ডুবে যায়। ইউকেএমটিও  জানিয়েছে, সামরিক বিভাগ টিউটরের শেষ বলা জায়গায় সামুদ্রিক আবর্জনা ও তেল দেখতে পেয়েছে। হামলার পর থেকে টিউটরের এক ক্রূ কে খুঁজে পাওয়াযাচ্ছে না। তিনি নাকি ওই জাহাজের ইঞ্জিন রুমে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কযুক্ত বা ইসরায়েলের সমর্থনকারী দেশগুলোর জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। হুতিরা এই নিয়ে দুইবার হামলা চালাল। হুতিদের হামলা করা প্রথম জাহাজটি ছিল যুক্তরাজ্যের মালিকানাধিন ‘রুবিমার’। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রায় ২ সপ্তাহ পর জাহাজটি ডুবে যায়।

হুতিরা দাবি করেন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ হলেই জাহাজ আক্রমণ তারা বন্ধ করে দেবে। হুতিদের হামলার ভয় এই নৌপথ এড়িয়ে অন্য পথে যাতায়াত করছে জাহাজগুলো।ফলে ব্যয় বাড়ছে।

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়ঃ ম্যাকেঞ্জি রো

Asia Monitor18 মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন হলেও তৃতীয় কোন দেশে এই পুনর্বাসন রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় বলে ঢাকার এক সংবাদ সম্মেলনে ১২ জুন বুধবার দুপুরবেলা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রো।

আগামী ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ঢাকায়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ম্যাকেঞ্জি রোয়ের কাছে কত পরিমাণ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি জানান যে এখনও পর্যন্ত ১২-১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। সামনে হয়তো আরও রোহিঙ্গাকে নেওয়া হবে তবে তিনি আরও বলেন যে এই পুনর্বাসন তৃতীয় দেশে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের নিরাপত্তার আবনতির বিষয় নিয়ে ম্যাকেঞ্জি রো বলেন,রোহিঙ্গা গোষ্ঠী বিপদে পরে সাময়িক সময়ের জন্য এখানে আশ্রয় নিতে এসেছে। তিনি বলেন আমাদের সহায়তা যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তারা যেন পায়ে সেটা নিশ্চিত করতে আমরা অংশীদারদের সাথে কাজ করছি। ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায়ে আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায়ে নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। মায়ানমার, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের রোহিঙ্গা সঙ্কটে ওই জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তায়ে সবচেয়ে বড় দাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাখাইন রাজ্যে গনহত্যা ও নানা সমস্যার জন্য প্রায় ৭লাখ ৪০হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২৪০ কোটি ডলার প্রদান করেছে।

মার্কিন দূতাবাসের রিজিওনাল রিফিউজি কোঅরডিনেটর জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নতুন সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

গাজার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ৩০০০ শিশু

Asia Monitor18 গাজার চিকিৎসক সূত্রে খবর,গাজায়ে ক্রমে চলে আসা ইসরায়েলের যুদ্ধে প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। আক্রমণের পরে হাজার হাজার শিশু অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ হারাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলই হামলায়ে গাজার অধিকাংশ হাসপাতাল বন্ধ ও হাসপাতালে খাবার ও ওষুধের সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অরথপেডিক সার্জেন ডঃ মোহাম্মদ শাহিন। ফলে চেতনানাশক ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ করাতে বাধ্য হচ্ছে চিকিৎসকরা।

এছাড়াও মানসিক আঘাত পাচ্ছে প্রবল।জাতিসংঘ বলেছে, গাজার ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন শিশুই খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে। খিদে, তেষ্টায়ে ও অপুষ্টিতে ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে। শিশুরা তিনদিনের মধ্যে প্রতি একদিন না খেয়ে থাকছে। খিদের অসহনীয় জ্বালা তারা সহ্য করতে পারছে না। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হীন হয়ে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত লোকেরা একটি স্কুলে আশ্রয় নেয় কিন্তু সেখানে বিমান হামলা করায়ে ৪০ জন নিহত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই হামলায়ে ১৪ জন শিশু নিহত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অক্টোবর থেকে চলে আসা এই যুদ্ধে ১৫ হাজার ৫০০এর বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলই হামলায়ে অঙ্গ হারানোর মধ্যে একজন হল শাম। তার মা আলজাজিরা জানান,তার ছেলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়েছিলো। তখন একটি শার্পনেল তার হাতে আঘাত করে এবং তার হাত সুতোয়ে ঝুলছিল। গাজায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার সমস্যা থাকায়ে ডাক্তারের আস্তে দেরি হলে শামের অপারেশন অ্যানাশতেসিয়ার মাধ্যমে করা হয়। গাজা উপত্যকায়ে নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে মারার জন্য ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে কালো তালিকায়ে যুক্ত করেছে জাতিসংঘ।

ইসরায়েলে হামলা ‘ফালাক২’ এর মাধ্যমে

Asia Monitor18 ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে তার জন্য এক নতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজুবুল্লাহ। শনিবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে তারা প্রথমবার ইসরায়েলের উত্তরঞ্চলে কমান্ড সেন্টারে ‘ফালাক ২’ রকেট ছুঁড়েছে। জানা গেছে এর আগেও কয়েক বার ‘ফালাক১’ ব্যবহারের পর এই অস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি।

এই হামলার ফলে ইসরায়েলে কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা তা জানা যাইনি।একজন লেবানিজ কর্মকর্তা সূত্রে খবর, গত কিছু সপ্তাহে গাজার দক্ষিণ রাফাহ শহরে ইসরায়েলই সেনা প্রবেশের ফলে হিজুবুল্লাহ আরও বেড়েছে। হিজুবুল্লাহ গত সাত মাস ধরে ইসরায়েলের সীমান্ত জুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছিল তবে এটি ইসরায়েলের আকাশ সীমার মধ্যে চালু করা সফল হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। এই গোষ্ঠীর আক্রমণ আরও জোরদার হচ্ছে এবং আরও গভীরে আঘাত করছে ও উন্নত অস্ত্রর প্রচলন করছে।

লেবাননের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফয়সাল আব্দুল সাতার জানিয়েছেন, “এটি ইসরায়েলই শত্রুকে বার্তা পাঠানোর একটি পদ্ধতি, যার অর্থ এটি আমাদের যা আছে তার একটি অংশ , এবং প্রয়োজন হলে আমরা আরও আঘাত করতে পারি”। হিজুবুল্লাহ লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ইলানিয়ার একটি ঘাঁটিতে ড্রনের সাহায্যে ইসরায়েলে গভীর আক্রমণ চালিয়েছে। গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায়ে ইসরায়েলের হামলা চলছে। এছাড়াও ইসরাইল ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজুবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আগের সপ্তাহে এই লড়াইয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও ইসরাইল লেবাননে আঘাত করছে এই আঘাতের ফলে বাগযুদ্ধ বড় যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলা

Asia Monitor18 ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটি ফ্রেডরিকসেনের পর এবার হামলার ঘটনা ঘটেছে রাজধানী কোপেনহেগেনের সড়কে। তাও আবার রাস্তায়ে সবার সামনে। শুক্রবার সন্ধে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের কুলতরতেভ এলাকার একটি রাস্তায়ে হামলা ঘটে।শহরের কেন্দ্রস্থলে এক ব্যক্তি তার কাছে হেঁটে আসে এবং তাকে আঘাত করে। এই ঘটনায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঘটনাটি দেখে স্থানীয় সংবাদপত্র বিটিকে জানিয়েছেন দুই নারী ম্যারি আদ্রিয়ান ও আনা রাভন। তারা এও বলেন এক ব্যক্তি বিপরীত পাশ থেকে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে জোরে ধাক্কা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জোরে ধাক্কা দেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী মাটিতে পড়ে যাইনি। বরং ঘটনার পর তিনি একটি ক্যাফেতে যান। প্রধানমন্ত্রীর চোট কতটা গুরুতর তা যানা যাইনি। এ হামলা ঘটেছে সেই সময় যার দুই দিন পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ডেনমার্কে।

এই ঘটনাকে ঘৃণ্য কাজ বর্ণনা করে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেছে,” আমরা যা বিশ্বাস করি এবং ইউরোপে যেটির জন্য লড়াই করি, তার বিরুদ্ধে এই ঘটনা।ঘটনা। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী ম্যাগ্নাস হিউনিকে এক্স পোস্টে জানিয়েছে, “ হামলার ঘটনায়ে মেটি হতবাক।আমি অবশ্যই চাই যারা তার কাছাকাছি থাকি তাদের প্রত্যেকে এই ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছে।

error: Content is protected !!