Daily Archives: June 26, 2024

মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি মামলায় চুক্তির পর মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মার্কিন ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেওয়ার চুক্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের নথি ফাঁস করে বহু মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল উইকিলিকস।

অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর ধরে ব্রিটেনে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, তাকে আর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে যেতে হবে না এবং যুক্তরাজ্যে কারাবন্দি থাকার সময়কে সাজা খাটা হিসেবে গণ্য করা হবে। উইকিলিকস জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগের মধ্যে একটিতে দোষ স্বীকার করবেন তিনি। এই আইনি প্রক্রিয়া বুধবার নর্দার্নমারিয়ানা আইল্যান্ডসের একটি আদালতে সম্পন্ন হবে। অ্যাসাঞ্জের মুক্তির ভিডিও উইকিলিকস তাদের এক্সে প্রকাশ করেছে, যেখানে তাকে বিমানবন্দরের পথে দেখা যায়।

উইকিলিকস ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেয়, যা বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এর মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত ৪০ হাজার নথি ছিল। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ২০০৭ সালে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে রয়টার্সের দুজন সংবাদকর্মীসহ এক ডজন মানুষকে হত্যা করতে দেখা যায়।

অ্যাসাঞ্জ ২০১১ সালে সুইডেনে যৌন নিপীড়নের মামলায় লন্ডনে গ্রেপ্তার হন এবং পরে জামিন পান। যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের আশঙ্কায় ২০১২ সালে একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। সাত বছর দূতাবাসে কাটানোর পর ২০১৯ সালের এপ্রিলে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং বেলমার্শ কারাগারে ছিলেন।

কারাগারে থাকাকালে অ্যাসাঞ্জ তার আইনজীবী ও দীর্ঘদিনের প্রেমিকা স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিদের মতে, অ্যাসাঞ্জের ফাঁস করা গোপন নথিতে নাম থাকা গুপ্তচরদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে অ্যাসাঞ্জের বিচার বন্ধে অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি অনুরোধ বিবেচনা করেন। তবে অ্যাসাঞ্জের মার্কিন আইনজীবী মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দিনটি তার স্ত্রী স্টেলা মরিস ও সমর্থকদের জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারি মামলায় স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বিশদ জবানবন্দি

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি কিনা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী। আদালতে দাঁড়িয়ে তার সাথে যৌন অভিজ্ঞতার কথা বিশদে বিবরণ দিলেন পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
যৌন কেলেঙ্কারির কথা ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেন ওই পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। এবং মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন ওই ৪৫ বছর বয়সী পর্ন তারকা।
২০০৬ সালে হোটেল কক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে কীভাবে তার যৌন মিলন হয়েছিল, তার খুঁটিনাটি তিনি তুলে ধরেন জবানবন্দিতে। সিএনএন লিখেছে, সেই বিবরণ এতটাই বিশদ ছিল যে তাকে থামিয়ে দিয়ে বিচারককে বলতে হয়েছে, এতটা না বললেও পারতেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
কাঠগোড়ায় বসে প্রায় কয়েক ঘন্টা ধরে ওই তারকা তার নিজের বক্তব্য রাখেন। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবং সেই ঘটনাটির কোথাও বিশদে আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এই পর্ন তারকা আদালতকে বলেন, ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর এ নিয়ে আর না ভাবার চেষ্টাই করেছিলেন তিনি।এবং বিষয়টা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কাও করছিলেন।
ড্যানিয়েলস জুরিদের বলেন, ২০১৮ সালে মুখ বন্ধ রাখার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসার পর তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়; তিনি একঘরে হয়ে পড়েন আর নিজের বাড়িতেও নিগৃহের শিকার হন।
তিনি জুড়িদের সামনে বিশদে সমস্ত কিছুর বিবরণ দেওয়ার ফলে ট্রাম্পের আইনজীবীরা তাতে আপত্তি জানায়। এবং বাড়তি কথা বলার জন্য ‘মিসট্রায়ালের’ আবেদন তোলেন।শুধু ‘জুরিদের জ্বালাতন করার জন্যই’ তিনি এত কিছু বলছেন- এমন যুক্তি দেখান আইনজীবীরা। বিচারকরা ওই পর্ন তারকার বিশ্বাস যোগ্যতা নিও প্রশ্ন তোলেন এবং তাকে নানান প্রশ্নে জর্জরিত করেন।
রয়টার্স লিখেছে, ড্যানিয়েলস স্বীকার করেন, তিনি ট্রাম্পকে ‘ঘৃণা’ করেন । তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে যে কেন তিনি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সাত বছর চুপ ছিলেন, এবং এখনো অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

তিনি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌনমিলনের কথা এবং মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার কথা অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তবে ড্যানিয়েল বলেন যে ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চেয়েছিলেন কারন তিনি জানতেন যে নির্বাচনে যদি ট্রাম্প যেতেন তাহলে আর কোন অর্থ সে দেবে না।
এখনো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা চলছে। অন্য যে মামলাগুলোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হল, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরাজয়ের পর ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে সরার পর রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি অসাবধানে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত। এই তিনটি মামলায়ই ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

চীনে তীব্র বৃষ্টির কারণে নগরগুলির দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে

এক ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে জলের নিচে তলিয়েছে চীনের দক্ষিণাঞ্চল শহরের রাস্তাগুলি পরিণত হয়েছে নদীতে পাতাল রেলস্টেশনের ভূগর্ভস্থ পথ দিয়ে জল উপচে পড়ছে রাস্তায়। নগর গুলি আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছে। তবে হতাহতের কোন খবর মেলেনি।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চাংশায় ৬৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জুন মাসে ঘণ্টব্যাপী বৃষ্টির নতুন রেকর্ড এটি, চীনের আবহাওয়া পরিষেবা সূত্রের খবর।ফলে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা ভারি বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে।বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চাংশায় কারও প্রাণহানি হয়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েকদিনে গুয়াংডংসহ চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সাধারণত চীনে জুলাইয়ের শেষের দিক করেই এরূপ বন্যার দেখা মিলে কিন্তু জুন মাসে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃষ্টি, অনেককেই অবাক করেছে। সামাজিক মাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে পাতাল রেলস্টেশনের ভূগর্ভস্থ পথ দিয়ে জল উপচে পড়ছে রাস্তায়। এবং বিকেলের মধ্যেই আর শহরের দুটি পাতাল রেলের লাইন বন্ধ করা হয় এবং বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থানও বন্ধ করা হয়।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, জরুরি বিভাগের কর্মীরা স্থানীয়দের রবারের নৌকায় করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেন এবং ডুবে যাওয়া বা রাস্তায় আটকা পড়া ব্যক্তিদের এবং গাড়িচালকদের উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন।
একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তার উইবো অ্যাকাউন্টে লিখেছেন “তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, এই রকমভাবে পড়তে থাকতে আমার কম্পাউন্ড একটা দ্বীপে পরিণত হবে।”
তীব্র ঝরো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের যুগলবন্দীতে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। ব্যাপকভাবে গড়ে তোলা জনবহুল মেগাসিটিগুলোর নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে নানান প্রশ্ন উন্মোচিত হচ্ছে এবং নগরগুলো আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ছে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান জানান এবং নিখোঁজ ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।

error: Content is protected !!