Daily Archives: June 25, 2024

৮ই জুলাই চীন সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী

আগামী ৮ জুলাই তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। ভারতের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে চীনের প্রসঙ্গও উঠেছিল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে ‘নিশ্চিন্ত’ হতে চায় নয়াদিল্লি। এ অবস্থায় সফরকালে নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ঢাকার কর্মকর্তাদের মধ্যে।

চীন বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ব‌লেও জানান চীনা মন্ত্রী। শেখ হাসিনা ব‌লেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৫০ বছরের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা দুই দেশই আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ততা চাই। অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইত্যাদি খাতে দুই দেশ সহযোগিতা বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে এসব বিষয়ে ফলাফল বয়ে আনবে।

চীন যে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং রাজনৈতিকভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে নিবিড় করতে চায়, সেটা সিপিসির নেতা লি জিয়ানছাওয়ের কথায় স্পষ্ট। গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

লি জিয়ানছাও বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে চীন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ব্যাপারে আমরা বলেছি। আমরা বলেছি, ওষুধ, চামড়া ও সিরামিক পণ্যগুলো তারা আমাদের থেকে নিতে পারে।’ বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন বলেও জানান ড. হাছান মাহমুদ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চেয়েছি। আমরা গাজা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে আমরা চীনকে অ্যাকটিভ রোল প্লে করার প্রত্যাশা করি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, চীন দেখছে, টানা চারবার ক্ষমতায় থাকার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক দিক থেকে একটি স্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক সহযোগিতায় মনোযোগ দিচ্ছে।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে তাদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কারণ, সিপিসির চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটে সরকারের নীতি কৌশলে। ফলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়, সেভাবে এগিয়ে যেতে আমরা তৈরি কি না, সেটা নিজেদের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করছে।’

ভারতের সঙ্গে জনগনের সম্মতি ছাড়া রেল চলাচল চুক্তি সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্ত: এবি পার্টি

গত সোমবার রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন এবি পার্টির নেতারা।দেশের জনগণকে না জানিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের চুক্তিকে সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে অন্যায় চুক্তি করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করি, নিজেদের আত্মমর্যাদা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করি।’

এ সময় তিনি পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কতিপয় কর্মচারী কীভাবে এত পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে, তা দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে, এই জবাব জনগণকে দিতে হবে। আমি বুঝতে পারি না পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন মতো একটি সংগঠন দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে কেন বিবৃতি প্রদান করল। যারা ক্ষমতার দাপটে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে তদন্তের কারণে তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কথা, কিন্তু পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন কেন আতঙ্কিত হচ্ছে, আমরা তা জানতে চাই।’

এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। দলটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, কেন্দ্রীয় নেতা লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আমরা দিল্লিকে বলতে চাই- বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি অবৈধ, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চুক্তি করে হয়তো সাময়িক সুবিধা নিতে পারবেন, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এ দেশের জনগণ এই অসম চুক্তি মেনে নেবে না।

শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না, মন্তব্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী

দিল্লি সফর নিয়ে মঙ্গলবার (জুন ২৫) সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন,শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত।’ একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে কোনো ক্ষতি নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বিক্রির ওজনটা কিভাবে করা হয়েছে? কোন কিছু বিক্রি হলেতো ওজন মেপে হয় না? এখনতো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে।আগে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হত। তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কিভাবে?

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা এই সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, সারাবিশ্বে একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নিজেদের রক্ত ঝরিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। বিশ্বে যারাই কোনো যুদ্ধে মিত্র শক্তির সহযোগিতা পেয়েছে, তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে কোনোদিন ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে। এখানে ভারত ব্যাতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে যুদ্ধ করে এসেছে। যখনই জাতির পিতা চেয়েছেন ভারত তাদের সৈন্য দেশে ফেরত‌ নিয়ে গেছে। তারা যুদ্ধের সরঞ্জাম সবকিছু নিয়েই এখানে যুদ্ধে এসেছিলো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করেছিলো তাদের কাছে। কিন্তু আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। কারণ তারা ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছে। এরপরেও যারা কথা বলে যে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে,‌ সেই বিক্রিটা হয় কিভাবে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন।

ভারতের সাথে ওষুধের চুক্তিতে বাংলাদেশে ওষুধের দাম কমবে কি না বা আমাদের দেশের মানুষ কম খরচে চিকিৎসা সেবা পাবে কি না-এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওষুধ শিল্পের অনেক কাঁচামাল ওখান থেকে আনতে হয়। আর কিছু কিছু ওষুধ আছে, যা এখনো আমরা উৎপাদন করি না। যদিও আমাদের ওষুধ শিল্প অনেক উন্নত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এক-দেড়শ ওষুধ রপ্তানি করি। এরপরও কিছু কিছু বিশেষ ওষুধ থাকে, যা আমাদের দেশে সেভাবে শিল্প গড়ে ওঠেনি। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ লাভবান হবে।

তিনি বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। সেজন্য ভিসা সহজে করা যায়, আমরা করে দিয়েছি। আমরা উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারবো আর যতো বেশি ব্যবসা বাণিজ্য আদান প্রদান হবে, এতে বাংলাদেশই লাভবান হবে।

error: Content is protected !!